বাবলু ক্লাস ফাইভে উঠেছে কিন্তু ওর মন মানসিকতা এখনও তেমন পরিপক্ক নয় ।বেশির ভাগ সময়েই কল্পনার জগতেই বসবাস করে ।ক্লাস চলাকালীন সময়টা সবসময় অন্যমনস্ক হয়ে থাকে ।জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে থাকে বেশিরভাগ সময় ।কেন এতটা আনমনা হয়ে থাকে বাবলু, তার বন্ধুরা অনেক চেষ্টা করেও কারণ উদ্ধার করতে পারে নি?? একা একা আপন মনে পাখির সাথে, গাছপালার সাথে কি যেন কথা বলে বাবলু ।তাই ওর নিক নাম বাবলু থেকে এখন পাগলু হয়ে গেছে ।
সবাই পাগলু বলে ডেকে, ওকে রাগানোর অনেক চেষ্টা করে ।কিন্তু বাবলুর হাবভাবের কোন পরিবর্তন হয় না ।কারো কথায় রাগেও না, কাঁদেও না, হাসেও না ।ওর এই স্বভাবের জন্য শেষ পর্যন্ত অন্যরাই বিরক্ত হয়ে, হাল ছেড়ে দে মা কেঁদে বাঁচি অবস্থা...!
তো একদিন পাগলুর ক্লাসের ক্লাস টিচার অনুপস্থিত ছিল ।সব স্টুডেন্টরা এর ওর খাতা নিয়ে আঁকি – বুঁকি খেলছে, হই – হুল্লোড় করছে ।কিন্তু বাবলুর বন্ধুদের দিকে কোন মনযোগ নেই!! সে তাকিয়ে আছে জানালা দিয়ে বাইরের দিকে ।সে দেখছে গাছে – গাছে, ফুলে – ফুলে প্রজাপতির লাফালাফি আর শুনছে মৌমাছির গুনগুন ।এমন সময় দেখে একটা ছোট পাখি জানালার শিকে বসে লেজ নাড়ছে আর এদিক সেদিক উঁকি – ঝুঁকি দিচ্ছে ।
পাখিটা ছটফট করছে দেখে পাগলু বলল, “ও পাখি, তোমার নাম কি?”
আরে বাবা..., এ যে অবাক কান্ড! পাখি পরিষ্কার বাংলায় বলে উঠলো, “ও মা! সে কি আমাকে চেননা? তোমার বুঝি দাদীমনি নেই?”
-“আরে থাকবে না কেন? আছে তো!”
-“তাহলে দাদীমনি তোমাকে আমার কথা বলে নি?”
-“আজব ব্যাপার! আমার দাদীমনি তোমাকে চিনবে কি করে?”
-“কেন দাদীমনি বলেনি –‘এক টুনিতে টুন টুনালো', পাগলু সাথে সাথেই বলে উঠলো, ‘সাত রাণীর নাক কাটালো' ।”
-“এই তো, তবে তুমি যে বললে, তোমার দাদীমনি জানে না।”
-“ও! তুমি সেই টুনি যে রাজার নাক কেটেছিল?”
-“যাহ্ বাবা, তুমি দেখি কিছুই বোঝনা! আমি কি হাতিয়ার ধরতে পারি? রাজাই তো চক্রান্ত করে আমাকে মারতে চেয়েছিল! আমি শুধু প্রাণ বাঁচিয়ে পালিয়েছি।”
-“তা ঠিকই বলেছো! সেই গানটা আর একবার শোনাবে?”
-“কোন গান?”
-“ওই রাজার ঘরে যে ধন আছে.....”
-“ধূর সে গান তো অনেক পুরানো হয়ে গেছে ।এখন তোমরা স্মার্ট ডিভাইসের যুগের শিশু, তোমাদের কি আর সে গান ভাল লাগবে? তোমাকে বরং নতুন গান শোনাবো, আগে কিছু খেয়ে নেই! খিদেয় পেটের মধ্যে, ‘মানুষে ডন মারছে'।”
-“কিন্তু আমরা তো বলি, ‘ছুঁচোয় ডন মারছে'!”
-“সে তো তোমাদের বোকা বোকা কথা! ছুঁচোকে কোনদিন ডন মারতে দেখেছো?”
-“না! তা তো দেখিনি!”
-“মোটু – পাতলুর কার্টুন দেখোনা? জন ডনকে মারে কে? মানুষ না ছুঁচো?”
-“মোটু”
- “আরে বাবা, এত কথা বাড়াও কেন? মোটু কি মানুষ না ছুঁচো?”
-“মানুষ”
-“তাহলে! একটা ছুঁচো কখনো ডন মারতে পারে?”
-“তা ঠিকই বলেছো!”
-“যা হোক, খেয়ে আসি আগে।”
-“আমার কাছে খাবার আছে, খাবে তুমি?”
-“কি এনেছো?”
-“চকলেট কেক খাবে ?”
টুনি একটু মুখ বাঁকিয়ে বললো, “উহু.... যত্তসব বাসি পচা খাবার..... ওতে রুচি নেই আমার ।বড্ড বেশি মিষ্টি, আমি ওসব খাইনা ।দাঁতে পোকা, পেট ব্যাথা আরও কত কি হতে পারে!!
-“তোমার আবার দাঁত আছে না কি?”
-“আগে ছিল তো..... মিষ্টি জাতীয় খাবার খেয়ে খেয়ে সব দাঁত পড়ে গেছে.... তখন আমরা উপরওয়ালার কাছে হাত জোড় করে অনেক কান্না – কাটি করলাম...., আমাদের দাঁত ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য ।উপরওয়ালা বললেন, তোমরা নিজেদের দোষে দাঁত হারিয়েছো, আর ফিরিয়ে দেওয়া যাবে না ।কিন্তু আমরা ‘না ছোড় পাখি' -এত সহজে হার মানবো কেন? অবশেষে উপরওয়ালা দেখে শুনে আমাদের এই ঠোঁট দিলেন!”
-“উপরওয়ালা আবার কে?”
-“আরে গাধা, তুমি দেখি কিছুই বোঝনা? উপরওয়ালা বলতে আল্লাহ্ কে বুঝিয়েছি।”
-“ও আচ্ছা বুঝলাম! এখন তো তোমার ঠোঁট আছে, তাহলে খাচ্ছ না কেন?”
-“ঠোঁটই তো সব, ঠোঁটে যদি পোকা লাগে! তখন লোকে বলবে, ঠোঁট থাকতে ঠোঁটের মর্ম বোঝে না ।তাছাড়া বাপু অনেক ঝামেলা! মুখ পরিষ্কার না রাখলে সবাই বলবে, এই বুড়ো বয়সে ঠোঁটে রং মেখে সং সেজে ঘুরছে, কতজনের কত চ্যাটাং চ্যাটাং কথা!! আমি বাপু ওই ঝামেলায় নেই।”
-“তুমিও তো কম কথা বল না ভাই? দাঁড়াও দেখি পকেটে ছোলা ভাজা থাকতে পারে, খাবে?”
-“হুম... ছোলা খুব ভালো খাবার ।প্রোটিন আছে, খেলে শক্তি বাড়বে ।দাও দেখি দুটো।”
টুনি টুকটুক করে ছোলাগুলো খেয়ে বললো, আহ্! কি শান্তি ।
-“তুমি তো একদম টকিং টম এর মতই কথা বলো।”
-“না, একদম নয়! আমি বলি না, টকিং টম আমার মতো কথা বলে ।ওটা তো এই ক'দিনের ছানা ।সবাই আজকাল আমায় নকল করে ।আমায় নকল করতে তো আর পয়সা দিতে হয় না।”
-“আচ্ছা যাই হোক, এবার একটা গান শোনাও।”
-“গান শুনবে নাকি গল্প শুনবে?”
-“ওকে তাহলে গল্পই বলো।”
-“তাহলে শোন....... সে অনেক দিন আগের কথা....... আমাদের রাজা তখন শিয়াল পন্ডিত.....”
-“ও মা, আমি তো জানি বনের রাজা সিংহ....”
-“সে তো আরও অনেক পুরানো কথা..... সিংহ ছিল এককালে, পরে সে ট্রান্সফার হলো চিড়িয়াখানায় ।তারপর এলো বাঘ..... তারও সিংহের মতই অবস্থা হলো... কেন দাদীমনির কাছে গল্প শোননি? বাঁশ বনে শিয়াল রাজা!”
_”হ্যাঁ শুনেছি ।তবে তুমি কি আমাকে বাঁশবনের গল্প শোনাবে?”
-“না, আচ্ছা বলতো বাঁশ বন আর ঝাউ বনের মধ্যে পার্থক্য কি? দুটোই তো মানুষের লাগানো......... আর্টফিশিয়াল....... সব বোকা বানানোর ফন্দি!”
-“ঝাউ বনের কথা আসছে কেন টুনি ভাই? আমি তো শুনেছি তুমিও বাঘের সঙ্গে চিটিং করেছিলে?”
-“চিটিং? কার বই ফলো কর ভাই?”
-“ওই অ্যাই প্যাডে যে সব কার্টুন আসে.....”
-“ধূর এরা যে সব কি লিখে........ মাথা মুন্ডু কিসসু নেই...... তার থেকে বরং আমাদের এক বিখ্যাত ঐতিহাসিক লেখকের ‘টুনটুনির বই' নামে একটা বই আছে, সেটা ডাউনলোড করে নিও।”
-“তোমাদের আবার ইতিহাস বই আছে না কি?”
-“হা হা হা! এখন সবাইকে পড়াশোনা করতে হয় বন্ধু ।নিজেকে অলটাইম আপডেট রাখতে হয় ।নইলে আজকালকার ছেলে – মেয়েরা বলবে ব্যাকডেটেড বুড়ো ।আমাদের শুধু ইতিহাস নয় জূগোলও আছে।”
-“এই জূগোলটা আবার কি জিনিস? খায় না মাথায় দেয়?”
-“খায়ও না, মাথাতেও দেয় না! তোমাদের পৃথিবী সম্পর্কে জানার জন্য যেমন ভূগোল আছে তেমনি আমাদের জূগোল ।আমাদের থাকার জায়গা তো কম, তাই জায়গা গুলোকে আমরা ভাগ করে নিয়েছি ।আচ্ছা যাই হোক, জূ – এর ব্যাপারে জানতে চাইলে পড়তে হবে জূগোল।তেমনি আছে আরও বগোল।”
-“ওয়াও থু.... বগল! হাত আর কাঁধ যেখানে যোগ হয়েছে সে স্থানটিকে আমরা বগল বলি ।খুব গন্ধ হয় গরমে...... ছি... ।
-“ধূর বোকা...! বগল নয় বগোল...! ব-গোল... ।বনে যারা থাকে তাদের বনের ব্যাপারে জানতে হবে না? তাই বনের ব্যাপারে জানার জন্য বগোল।”
-“কিন্তু গোল কেন? পৃথিবী গোল বলেই তো বলে ভূগোল ।তোমাদের বন কি গোল?”
-“আরে না...! সব কিছুকে বাঁধাধরা ছকে ফেলা মানুষের কাজ ।সব জায়গায় স্টিরিও টাইপ আর পারসেপশান দিয়ে বিচার করা – ফরসা হলেই সুন্দরী, মোটা হলেই অলস, দাড়ি থাকলেই টেরোরিস্ট, ইংরেজি বললেই শিক্ষিত.....”
-“ওহ্ বুঝেছি বাবা! ব-গোল না পড়লে বনের মধ্যে রাস্তা হারিয়ে গোল গোল ঘুরতে হবে ।এবার বলো জূগোল কেন টুনি?দাঁড়াও আমি বলছি..... জূগোল না পড়লে জূ এর মধ্যে গোল গোল ঘুরতে হবে – তাই জূগোল।”
-“আবার সেই ছক....... জূ এর মধ্যে তো প্রত্যেককে খাঁচায় বন্দী রাখা হয় ।ঘুরবে কি করে....?”
-“তাহলে?”
-“জূ থেকে বেরুতে চাইলে কিভাবে গোল পাকিয়ে বেরুতে পারবে সেই বিদ্যা পাবে যে বইয়ে, সেটা হল গিয়ে জূগোল।”
-“ওকে বাবা, বুঝলাম ।কিন্তু কোন ঐতিহাসিক এর কথা বলছিলে যেন? কে তোমাদের ইতিহাস লিখেছেন?”
-“ও মা! তাও জানো না? ঐ যে তোমাদের জন্য অনেক ছড়া লিখেছেন – ‘কুমড়ো পটাশ, হাট্টিমা টিম টিম'-সুকুমার রায়?”বুঝেছো ওই রায় সাহেবের ড্যাড, পরম শ্রদ্ধেয় ঐতিহাসিক শ্রী উপেন্দ্রকিশোর রায় ।ওনার বই আমাদের স্কুলে পড়ানো হয় – বলেই টুনি কপালে একবার পা ঠেকিয়ে সালাম করে নিল।”
-“বাব্বা....! তোমরা এত এগিয়ে গেছো জানতাম না তো।”
-“জানবে বা কি করে? ওনার পর সেই ভাবে তো কেউ আমাদের কথা লিখলেন না ।আফসোস......!”
-“তা বটে! তারপর গল্পটা শুরু কর তো শুনি.......”
-“হ্যাঁ, তো সেই ঝাউ বনের রাজা তখন শিয়াল........ শিয়াল রাজা হয়েই ভীষণ কুঁড়ে হয়ে গেছে ।সারাক্ষণ খালি ‘জঙ্গল রান' আর ‘জিরাক্কেল’ দেখেন।”
-“এই জিরাক্কেল আবার কি?”
-“জিরাক্কেল জান না? তোমাদের যেমন মীর নামে একজন হাসিয়ে ছাড়েন, তার শো এর নাম – মিরাক্কেল ।ইদানীং বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলার কনটেন্সট্যান্ট কেও দেখা যায় ।তেমনি আমাদের এন্টারট্রেইনার হলো জিরাফ ।ওই প্রোগ্রামটি জিরাফ হোস্ট করে তাই নাম হয়েছে – জিরাক্কেল।”
_”তোমাদের রাজা ‘জঙ্গল রান' কোথায় দেখেন।”
-“তোমরা যেমন আইপ্যাড এ, অ্যানড্রোয়েড মোবাইলে ‘টেম্পল রান' খেল, তেমনি ওই জঙ্গলেই আমাদের মঙ্গল ।তাই জঙ্গলেই আমরা দৌড় প্রতিযোগিতা দেই ।সেই প্রতিযোগিতার নামই ‘জঙ্গল রান’।”
-“সে তো তোমরা অলটাইম জঙ্গলে দৌড়াও! তার মধ্যে আবার দেখার কি আছে??”
-“ওখানেই তো মজা! তোমাদের ‘টেম্পল রান’ দেখে, ‘কিছু মানুষের মত ধূর্ত' শিয়াল মহারাজ খুবই ইন্সপায়ার্ড..... শুরু করলেন ‘জঙ্গল রান’ ।এ খেলায় একেক দিন একেক প্রাণীকে রানার আর অন্য একজনকে চেজার এর রোল দেয়া হয় ।সামনে থাকে বিভিন্ন রকম অবস্টেকল ।বিপদে অবশ্য দুই জনেই থাকে ।
যদি চেজার রানার কে ধরতে পারে, তবে মহারাজ রানারকে খাবেন আর ধরতে না পারলে চেজার কে খাবেন ।এক কথায় উনি বসে বসে খাওয়ার একটা বুদ্ধি বের করেছেন ।আর ওই করে করে মহারাজ দিনে দিনে অলস হয়ে যাচ্ছেন ।ভুঁড়ি – টুড়ি হয়ে একাকার অবস্থা ।প্রেশারও হাই হয়ে গেছে ।এখন অবশ্য একজন ফিজিক্যাল ট্রেইনার আসেন সপ্তাহে দুই দিন করে।”
-“ফিজিক্যাল ট্রেইনার টা আবার কে?”
-“গেস কর?”
-“খরগোশ?”
-“না না, ওটা বড় বেশি হাই জাম্প মারে ।ওয়ান মোর চান্স।”
-“ঘোড়া?”
-“উহু, ঘোড়া পাবে কোথায়? তোমরাই তো ওগুলো সব নিজের সম্পত্তি করে রেখেছো!”
-“প্লিজ মাথা খেওনা, দ্যান হু?”
-“হাঁস মশাই ।কিন্তু যে হাঁস ট্রেনিং করাতে যায় তাকে দ্বিতীয়বার গুগল সার্চ দিয়েও আর খুঁজে পাওয়া যায় না।”
-“কেন...? কোথায় যায়?”
-“কোথায় আবার যাবে! রাজাই গিলে খায় ।কিন্তু রাজার মুখের উপর কথাটা বলবে কে?ধূর্ত শিয়াল মহারাজের সামনে সাহসীরাও কাবু হয়ে যায় ।সেখানে কার ঘাড়ে কটা মাথা।”
-“হুম....... গল্পটা শুরু করো, প্লিজ....টুনি।”
-“হ্যাঁ...তো সে বহুদিন আগের কথা.... ।প্রচুর লোক পিকনিকে এসেছিল সমুদ্রের ধারে ।পাশেই জঙ্গল........
তো সেই পিকনিকের দলে ছোট্ট একটা ফ্যামিলি ছিল ।মা, বাবা আর পরীর মত দেখতে ছোট্ট একটি মেয়ে ।
মা – বাবা সমুদ্রের ধারে সুন্দর প্লট পেয়ে একটু রোম্যান্টিক হয়ে টাইটানিক পোজ দিচ্ছিলো ।মেয়েটি এদিকে একা খেলতে খেলতে জঙ্গলের মধ্যে ঢুকে পড়ে ।বনের মধ্যে ঘুরতে ঘুরতে টায়ার্ড হয়ে বাচ্চা মেয়েটি একটা গাছের নিচে বসে ঘুমিয়ে পড়েছিল। এমন সময় একটা বানর মেয়েটিকে দেখতে পায়......... ।
সুন্দরী মেয়ে বাচ্চা দেখে বানরের খুবই পছন্দ হলো। বানরটি মেয়েটিকে কোলে করে তার বাড়ি নিয়ে গেলো।”
-“এ তো টারজানের কপি!”
-“এই তো মুশকিল ব্যাপার, গল্পের মাঝে এত কথা বলো কেন? বর্তমানে এই স্মার্ট ফোনের যুগের ছেলে – মেয়েরা, ইউটিউব ব্যাবহার করে বিভিন্ন ভিডিও দেখে আর গেম খেলে খেলে বেশি ওভার স্মার্ট হয়ে যাচ্ছে...... যে কোন কিছু পুরো শোনার আগেই কনক্লুসান টেনে বসে থাকে..... ।হ্যাভ পেসেন্স.... বন্ধু....?”
-“ওকে এত কথা না বলে কন্টিনিউ কর?”
-“হ্যাঁ তো, বানর মেয়েটিকে নিয়ে তার বাড়িতে গেলো। ভাবলো এই মেয়ে একটু বড় হলে তাকে বিয়ে করবে। তাহলে হয়তো ছেলে – মেয়ে রা ‘’একটু মানুষ' হবে।”
-“ ‘একটু মানুষ’ আবার কি ধরনের ভাষা?”
-“যাহ্ বাবা তাও বোঝো না! মানুষ আর বানরের সন্তান ‘পুরোপুরি মানুষ’ হবে কি করে? অর্ধেক মানুষ আর অর্ধেক বানর হবে।”
-“হুম....... হাইব্রিড.....”
-“একজ্যাক্টলি....যাক এবার শোন। বানর মেয়েটিকে নিয়ে গিয়ে তার ফ্ল্যাটের ঘাসের বিছানায় শুইয়ে দিলো।”
-“হোয়াট?? ফ্ল্যাট.....?”
-“হ্যাঁ, এখন কি আর আগের মত জায়গা আছে যে, যার যেখানে খুশি শুয়ে পড়বে। এখন সব জায়গাতে একই সমস্যা..... সবার নির্ধারিত স্থান বুকিং থাকে। কেউ কারও স্থানে যাবে না। জায়গা যত ছোট হবে আমাদের জন্য ভালো, কারণ বড় স্থান ক্লিন করতে পরিশ্রম হয় বেশি।”
-“ক্লিন?”
-“হ্যাঁ, তোমাদের ওই ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ' মিশন যখন থেকে শুরু হয়েছে......, আমাদের মহারাজও ভাবলেন প্রজাদের জন্য কিছু করবেন।উনিও শুরু করে দিলেন তার কার্যক্রম। ঝাড়ু হাতে ফটো তুলে সবার মুখে মুখে দিলেন আটকে।”
-“সবার মুখে কেন?”
-“আরে, আমরা আবার ফেসবুক পাব কোথায়? তাই মহারাজ ফটো মেরে সবার ফেস কে বুক করে দিলেন, হয়ে গেল ফেসবুক। সব জায়গায় এডভারটাইজিং ভাই......... সবার চেয়ারের মায়া!!”
-“তো আর কি কি শুরু করেছেন শুনি?”
-“ ওই তো সবার জন্য স্মার্ট আইডি কার্ডের ব্যবস্থা করেছেন।সবার জন্য বাধ্যতামূলক.......”
-“ও আচ্ছা! সবার আছে.....?”
-“মোটামুটি! যারা বিদেশে থাকে আর পেঁচা ছাড়া সবার আছে।”
-“পেঁচা আবার কি দোষ করলো?”
-“ও তো সারারাত কল সেন্টারে কাজ করে, দিনে ঘুমায়।আর আলোয় তাকাতে পারে না। যখনই ছবি তুলতে যায়, চোখ বন্ধ করে ফেলে! রাতের বেলা রাজকর্মীরা কাজ করবে কেন?”
-“হুম তা তো বটে। আর কি করেছেন তোমাদের মহারাজ।”
-“আরও আছে, ওই যে যা খাবে, সবাইকে খাদ্যের কিছু অংশ মহারাজের নামে জমা দিতে হবে।মহারাজ নাকি সেটা দিয়ে প্রজাদের উন্নয়ন করবেন।”
-“যাক মহারাজের কথা ছাড়ো ......সেই মেয়েটির কথায় আসা যাক......”
-“শুকনো ঘাসের বিছানায় শুয়ে দেওয়াতে মেয়েটির গা চুলকাতে শুরু করেছে। মেয়েটি গা চুলকাতে চুলকাতে উঠে পড়লো ।উঠেই দেখে সামনে একটা বানর....! খুশিতে লাফিয়ে উঠে বললো..... ওয়াও! মাঙ্কি...... সো সুইট!!!”
বানর ভাইয়া তো আনন্দে লাফাচ্ছে....!! মেয়েটি ‘ওয়াও’ বলেছে, ‘সুইট’ বলেছে........ তার মানে মেয়েটির তাকে পছন্দ হয়েছে!
-“রোম্যান্টিক গলায় বানর বললো, তোমার নাম কি?”
-“মেয়েটি বললো, আই অ্যাম লামিশা, অ্যান্ড ইউ?”
বানর তো ভাবনায় পড়ে গেল! তার তো কেউ কখনও নাম দেয়নি।
-“জান না? দ্যাটস্ ওকে..... তোমার নাম দিলাম 'গেছো'।”
-“ ‘গেছো'? মানে গাছের বানর। এখন কি আর আগের মত গাছ আছে যে, গাছে থাকবো? আর বেশিরভাগ বানরকেই তো তোমরা চিড়িয়াখানায় বন্দী করে রেখেছো – বলেই বানর ফ্যাচ ফ্যাচ করে কাঁদতে যাচ্ছিল........”
-“মেয়েটি বললো, জাস্ট শাট আপ...., ধূর বোকা, ওটা ‘পঞ্চতন্ত্রের মন্ত্রের' একটা গ্রেট ক্যারেক্টারের নাম!.... আমার খুবই খিদে পাচ্ছে........”
-“কলা খাবে? ফ্রেশ দেখে দুইটা গাছ পাকা কলা নিয়ে আসি।”
-“আমি পিজা নতুবা বার্গার খাব!”
বানরটা কিছুই বুঝতে পারে না, কি খাবারের কথা বলছে?? একটু মাথা চুলকে বলে, এই জঙ্গলে তো ওসব পাবে না।আমরা সব ফ্রেশ খাবার খাই। ফলের মধ্যে অপশন আছে – কলা, পেয়ারা, আম, জাম........ খুঁজে খুঁজে এক আধটা আপেলও আনতে পারি.....
তখন মেয়েটি পা ছুঁড়ে কাঁদতে লাগলো......! না..... আমি চকলেট খাবো........
বানর ভয় পেয়ে বললো, চুপ, চুপ, চুপ......... কেউ শুনে ফেলবে। এই কথা শুনে মেয়েটি আরও জোরে ভ্যাঁ ভ্যাঁ করে কাঁদতে শুরু করলো.....।
ওদিকে পাশের ফ্ল্যাটে থাকতো ধড়িবাজ একটা বানর। সে কান্না শুনে ভাবলো এটা আবার কার ডাক শোনা যাচ্ছে। এ তো কোনও বানরের গলা নয়। নিশ্চয়ই কোন ঘটনা আছে??
তারপর সে চুপি চুপি উঁকি দিয়ে দেখে নিল। সর্বনাশ....... এইটা তো মানুষের বাচ্চা। আবার না একটা এলাহী কান্ড ঘটে! ভেবেই সঙ্গে সঙ্গেই মারলো দৌড় রাজার কাছে।
রাজা শুনে বললো, কি বিপদ! সর্বনাশ করেছে, বাঘে ছুঁলে আঠারো ঘা, আর মানুষ ছুঁলে মামা বাড়ি যা.....।আগের রাজা বাঘমশাই এর সময় ঠিক এরকম একটা কেস হয়েছিল। কয়েকটা মানুষ খাওয়ার অপরাধে তাকে ধরে নিয়ে জেলে ঢুকিয়েছে।সে কি প্যাদানি.... বাঘমশাই আর গদিতে বসার সাহস পেলেন না। আর আমি তো কোন ছার.....! বলেই অর্ডার করলেন, আগে বেয়াদব টাকে বেঁধে নিয়ে আয়, দেখিস মানুষের বাচ্চার যেন কোন ক্ষতি না হয়......।
সঙ্গে সঙ্গেই চার – পাঁচটা পালোয়ান বানর লেজ উঠিয়ে দিল দৌড়........ নিয়ে এলো কালপ্রিট বানরকে বেঁধে। মেয়েটি তো কেঁদে অস্থির....... তাকে কলার কলিপপ দিয়ে একটা পালোয়ান বানর বললো, ‘ডোন্ট ওরি ম্যাডাম, উই আর রেস্কিউ টিম'- তারপর ভুলিয়ে ভালিয়ে রাজার কাছে নিয়ে গেলো।
-“এই রে, তোমাদের ম্যাডাম এসে গেছে...।এখন যাই...... কাল দেখা করার চেষ্টা করবো....., বলেই টুনি ফুড়ুত করে উড়ে গেল।”
আর বাবলু বলেই চলেছে – টুনি ভাই, ফোন নাম্বার, হোয়াটস্ অ্যাপ, ভাইবার, স্কাইপি, ফেস টাইম..... কিছু তো দিয়ে যাও ভাই। কি মুশকিল........
-“কালকে একটু এক্সট্রা খাবার এনো, মহারাজ কে ‘ইনকাম ট্যাক্স' দিতে হবে.....”
টুনি চোখের আড়ালে চলে গেল............
0 Comments