আজ হঠাৎ অতীতের কিছু স্মৃতি মনে পড়ে গেল। কেন মনে পড়লো জানিনা!!! যে কোন একটা কারণে, যা বলতে চাচ্ছি না… গতকালকে আত্মসম্মানে প্রচন্ড আঘাত পেয়েছি। আসলেই আমরা মেয়েরা নিজেরাই একে অপরের শত্রু।
নিউটনের তৃতীয় সূত্রের কিছুটা প্রতিফলন হয়তো হচ্ছে।মনটা কথার আঘাতে সিক্ত হয়ে আছে। গলা ফাটিয়ে কাঁদতে ইচ্ছে করছে।
কিন্তু আশ্চর্যের ব্যাপার যে ঘটনার কথা মনে পড়ছে, তার সাথে আমার সাথে ঘটে যাওয়া, ঘটনার কোন সম্পর্ক নেই।মানুষের মন এত অদ্ভুত কেন???
তখন আমি অনার্স প্রথম বর্ষের ছাত্রী। যে কোন কারণেই হোক; ভুলে গেছি, ক্লাস শেষে বিনোদপুর গেট দিয়ে বাইরে যাচ্ছিলাম। কিন্তু গেটের কাছে আসতেই একেবারেই শকড্ হয়ে গেলাম।দেখলাম একজন স্বাস্থ্যবান সুন্দর ছেলে কোমড় বাঁকিয়ে হাঁটু মুড়ে, হাত দুটো হাঁটুর নিচ দিয়ে গলিয়ে, কানে ধরে প্রায় উপবৃত্তের আকারে বসে আছে। আর তার সামনে হাতে লম্বা প্যান্টের বেল্ট সপাৎ সপাৎ করে নাচিয়ে নাচিয়ে টহল দিচ্ছে এক লম্বা চওড়া ফুটন্ত টগবগে যুবক। অনেকটা সেই “শোলে” ছবির আমজাদ খানের মতই ছিল তার চলন বলন ও হাস্য কৌতুক।
আশেপাশে অনেক লোক ঘিরে আছে কিন্তু কেউ কিছু বলছে না।ঠিক এ মুহুর্তে আর একটা ছেলেকে ক্যামেরাতে সেই লোকটির দাপট ও ব্যাঙ্গ হয়ে থাকা ছেলেটির করুণ অবস্থা রেকর্ড করতে দেখে, আমি একপ্রকার নিশ্চিত হয়েই গেলাম, দ্বিতীয় “শোলে”- এর মতোই কোন একটা সিনেমার শুটিং হচ্ছে মনে হয়।
বান্ধবীকে বললাম,-সিনেমার শুটিং দেখার সৌভাগ্য হলো রে…..!! ও রাগ করে বললো-চল যাই! শুটিং দেখে লাভ কি?? কাউকে তো চিনিনা। আমি বললাম – হয়তো নতুন চরিত্র, কাউকে জিজ্ঞেস করি!! তাই পাশের একজনকে বলেই ফেললাম, সিনেমার নাম কি ভাই??
লোকটি আমার দিকে ঘুরে এমন কটমট করে তাকালো যে, আমার মনে হলো, আমি হয়তো মারাত্মক কিছু একটা ভুল করে ফেলেছি। হঠাৎ আমার মনে হলো, হয়তো এই লোকটি কোন স্বনামধন্য নায়ক বা চরিত্রাভিনেতা হতে পারে।তাঁকে চিনতে না পারার জন্য হয়তো উনি অপমানিত হয়ে আমার দিকে ওভাবে তাকালেন। তাই আমি এবার একটু ভয়ে ধাতস্ত হয়ে তাঁর দিকে মাফ চাওয়ার ভঙ্গিতে তাকালাম। এবার লোকটি আমাদের সে অবস্থা উপভোগ করে বললো, না, এটা কোন শুটিং নয় বুঝলেন? আশেপাশের সবাই ভীতু চোঁখে তাকিয়ে আছে আমাদের দিকে।
লোকটি বললো, ছেলেটি হিরোইনখোর, এই বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যাণ বিভাগের ছাত্র। অনেক বড়লোকের ছেলে কিন্তু ছিনতাই করতে গিয়ে ধরা পড়েছে। তাই শাস্তি চলছে……!! বেল্ট দিয়ে ছেলেটিকে বেদম মেরেছে। এখন ফান-ডাউন শাস্তি চলছে। আমি বললাম, নীল-ডাউন শুনেছি ভাই কিন্তু ফান-ডাউন টা কি বুঝলাম না?? কি বলছেন? যদি না জানেন তাহলে কাছে গিয়ে দেখে জেনে নিন??
আমরা দুই বান্ধবী ভয়ে একে অপরের মুখের দিকে দেখতে লাগলাম। দুজনেই সিদ্ধান্ত নিলাম গন্ডগোল লাগতে পারে, তাই ওখান থেকে চলে যাওয়াই উত্তম। নিজের অজান্তেই ছেলেটির দিকে দৃষ্টি চলে গেলো। সত্যি সে কি ভয়ঙ্কর তার শাস্তিরে বাবা! ওরকম ভাবে কোমড় বাঁকিয়ে কতক্ষণ আছে কে জানে? যে কোন স্বাভাবিক মানুষের পক্ষে পাঁচ মিনিটের বেশি ওভাবে থাকা প্রায় অসম্ভব।কিন্তু ছেলেটিকে দেখলাম নির্বিকার ভাবে নিচের দিকে তাকিয়ে আছে। মুখ দিয়ে কোন শব্দ করছে না কিন্তু খেয়াল করলাম চোঁখ দিয়ে অঝোরে অশ্রু ঝড়ছে।
খুবই মায়া লাগলো ছেলেটির দিকে তাকিয়ে।
এত ভাল একটা সাবজেক্টে পড়ে, দেখেই বোঝা যাচ্ছে স্বচ্ছল পরিবারের সন্তান। তারপরেও কেন নেশার জগতে বিচরণ করে শিক্ষিত ছেলে – মেয়েরা বুঝতে পারিনা। অনেকে ছবি তুলছিলো হয়তো ফেসবুকে দিবে। ছেলেটি হেলতে দুলতে যখনই পেছনের হাত দুটি আলগা হয়ে যাচ্ছে তখনই সুন্দর লম্বা ছেলেটি মারছে লাথি। আমরা সেখান থেকে তড়িঘড়ি করে চলে গেলাম।
আমাদের ব্যর্থতা আসলে কোথায়??দোষ কি পরিবারের সদস্যদের নাকি সমাজের?? আমি আসলে বুঝতে পারি না……??
0 Comments